বাংলাদেশের ক্রিকেটের আবহাওয়াতে হাতুরুসিংহর পূর্বাভাস, কেন সেটা নেতিবাচক 

চন্ডিকা হাতুরুসিংহ বাংলাদেশ ক্রিকেটকে একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। তার অবদান অস্বীকার করার যৌক্তিক কোন কারন ও নেই। মূলত তার আমলেই বাংলাদেশ বড় দলগুলোর সাথে কমর বেধে লড়াই করা শুরু করে। কিন্তু তার পারদর্শিতার লেভেল ওই পর্যন্তই। বাংলাদেশে ক্রিকেটকে দেওয়ার মত তার কাছে আর তেমন কিছু নেই। তাছাড়া হাতুরুসিংহ বাংলাদেশের ক্রিকেট ছেড়ে যাওয়ার আগেও বলে গিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দেওয়ার মত তার কাছে আর কিছু বাকি নেই। হাতুরুসিংহ নিজ থেকে এভাবে ঘোষণা দিয়ে দেওয়ার পর তাকে ফিরিয়ে আনাটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্ন সময়ের কাছে তোলা থাকল।

বাংলার ক্রিকেট পাড়ায় বেশ কয়েকদিন ধরে একটা নাম বার বার উচ্চারিত হচ্ছে আর সেটা হচ্ছে চন্ডিকা হাতুরুসিংহ। রাসেল ডোমিংগো পদত্যাগ করার পর সেই নামটি আরও জোরে বাজছে কানে। শোনা যাচ্ছে বিসিবি ইতিমধ্যে তার সাথে কথাবার্তা অনেক দূর কথা নিয়ে এগিয়ে গেছে এখন শুধু অফিসিয়ালী দায়িত্ব নেয়াটাই বাকি। হাতুরুসিংহ বাংলাদেশের জন্য অতীত এক অধ্যায় , আর সেই অতীতকে বর্তমানের সাথে বেধে দিলে ক্রিকেটের বড় ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট কারন আছে।

হাতুরুসিংহর কাজ করার ধরন অনেকটা নেতিবাচক ধাঁচের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই ক্রান্তিকালে ক্রিকেটের মরিনহো ফিরিয়ে আনাটা হিতে বিপরীত হতে পারে। জেমি সিডন্সের উদাহরন এক্ষেত্রে  আনা যেতে পারে । অতীতে একটা সময় জেমি সিডন্স বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে অনেক ভালো কাজ করেছেন আর সেই সূত্র ধরেই তাকে  দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটস্ম্যানরা তার উপস্থিতীতে যথেষ্ট উজ্জিবীত হতে পারেনি। বাংলাদেশের ব্যাটারদের সাম্প্রতিকালের পারফরম্যান্স দেখলেই বিষয়টা পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাব। বিগত ১ বছরে ব্যাটারদের পারফরম্যান্স খারপ থেকে খারাপতর হয়েছে।  সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার বেশ ভালো সম্ভবনা ছিল কিন্তু সেটা ধূলিসাৎ হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের নিষপ্রভতায়।

অতীতে একজন ভালো করেছেন এর মানে এই নয় তিনি বর্তমানকে আর উজ্জ্বল করে দিতে পারবেন। বরং উজ্জ্বলতার পরিবর্তে বর্তমান ধুসর বর্ন ধারন করতে পারে বিশ্বকাপের মত গুরুত্বপুর্ন আসরের আগে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একদম নুতুন কাউকে দরকার যিনি একবারে শূন্য থেকে শুরু করবেন তদুপুরি যার থাকবে না কোন অতীতের বোজ। মুদ্দা কথা যার সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোন অতিত ইতিহাস নেই। নেই কোন সফলতা বা ব্যার্থতার গল্প।

বলা বাহুল্য অতীতে হাতুরুসিংহর সাথে ক্রিকেটারদের ও টিম ম্যানেজম্যান্টের বেশ কিছু বাজে অভিজ্ঞতাও রয়েছে।শেষের দিকে বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে হাতুরুসিংহর সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয়।

কড়া হেডমাস্টর ও উপমহাদেশিক কোচ এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আবার তাকে নিয়ে আসলে মোটেও যুক্তিসংগত কাজ হবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পারদরর্শিতা দেখানোর পর শ্রীলংকা তাকে কোচ বানায় এবং সেই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার জেরেই তাকে অপসারন করে শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ড। যদিও তিনি বেশ ভালো করছিলেন।

২০২৩ সালে ভারতে বছর অনুষ্টিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপের গুরুত্ব বাংলাদেশের কাছে স্টেশনে অপেক্ষ্মান শেষ ট্রেনের মত । যেটি ট্রেন মিস করলে সারা বিশ্বে মিসড ট্রেন হিসিবে পরিচিত হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। হয়ত হারিয়ে যাবে নেদারল্যান্ড, নামিবিয়া, আয়ারল্যান্ডের মত ওঠতি প্রতিশ্রুতিশীল ও সাফল্যের জন্য ক্ষুদার্ত দলগুলোর ভিড়ে। একটা দল দ্বিপাক্ষিক সিরিজে যত ভালো করুক, ক্রিকেট অঙ্গনে মর্যাদা পেতে হলে বিশ্ব আসরে ভালো করার বিকল্প নেই। এই একটা কারনেই বাংলাদেশকে ভালো দলগুলো সেই রকম হাতে গুনেনা। অস্ট্রেলিয়া ,ইংল্যান্ডের মত দলগুলো শুধুমাত্র স্পন্সর দোহাই দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আমন্ত্রন জানায় না। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একই সাথে দুঃখের ও অপমানের।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর হয়ত চার পান্ডব হিসিবে পরিচিত সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহামুদল্লাহরা অবসর নিয়ে নিবেন। তাদের বয়স বিবেচনায় ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ তাদের জন্য খেলাটা অবাস্তব। তাদের মাপের ক্রিকেটার বাংলাদেশ ভবিষ্যতে তৈরি করতে পারবে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক স্বার্থে হাতুরুসিংহর এমন কাউকে কোচ হিসিবে নিযুক্ত করা উচিৎ যিনি কিনা ক্রিকেটার ও ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ থাকবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *