রুবেল হোসেনের সফলতা ও ব্যর্থতার পাণ্ডলিপি

বাংলাদেশ ক্রিকেটে রুবেল হোসেনের প্রত্যাবর্তন অনেকটা রুপ কথার গল্পের মত। গ্রামীনফোন পেসার হান্টের মাধ্যমে তিনি নির্বাচকদের নজর কাড়েন । তারই ধারাবাহিকথায় তিনি জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হোন।

১২ বছরের ক্যারিয়ারে যেমন অনেক ভাল পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে দলকে ব্যর্থতা চাদরে মুড়িয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুটা রাজকীয়ভাবে করলেও বর্তমান সময়ে রুবেল ক্রিকেট মাঠে নিজের ছায়া হয়ে বেড়ান ।

আমরা আজকে তার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন নিয়ে আলোচনা করব এবং জানার চেস্টা করব এই এক যুগ সময়কালে তিনি কতটুকু তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন।

রুবেলের শক্তিমত্তা 

বাংলাদেশ দলে রুবেলকে নেওয়ার পেছেন সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল তার গতি, এমনকি তিনি বর্তমান সময়েও বাংলাদেশের অন্যতম গতিময় বোলার।সোজা ভাষায় বলতে গেলে বাংলাদেশ দলে যদি সেরা পাঁচজন গতিময় বোলারদের তালিকা করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহ তিনি প্রথমদিকেই থাকবেন।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি নিয়মিতভাবে ১৪৫ কি.মি গতিতে বল করতেন, যদিও বর্তমানে গতি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।

রিভার্স সুইং করে ব্যাটসম্যানকে ফাদে ফেলাই সাধারণত তার শক্তি মত্তার প্রধান জায়গা। উপরন্তু, তার বোলিং অ্যাকশন অনেকটা শ্রীলংকান পেস বোলার লাসিথ মালিংঙ্গার মত এবং তিনি তার বোলিংয়ের এঙ্গেল ব্যাবহার করে প্রায়শই ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলেন।

রুবেল হোসেনের সীমাবদ্ধতা

নুতুন বলে রুবেল হোসেনের পটুতা খুবই সীমিত পরিসরের, বরং পুরোন বলেই বেশি সাছন্দ্যবোধ করেন। কনভেনশনাল আউট সুয়িং এ দক্ষ না হওয়ায় ইন সুইং এর উপর অধিক নির্ভরশীল ।

অপরদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে দুইপ্রান্তে থেকে দুটি বল ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা থাকার কারনে রুবেল হোসেন তার শক্তিমত্তা(রিভার্স সুইং) সঠিক প্রয়োগ করতে পারছেন না।

ক্যারিয়ারে একটা সময় তিনি নিখুতভাবে ইয়র্কার বল করতে পারতেন, কিন্তু বর্তমানে এই অস্ত্রটির ব্যবহার সর্বত্তোমভাবে করতে পারছেন না। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বোলিং স্পেল ভালভাবে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ডেথ ওভারে প্রচুর রান দিয়ে দিচ্ছেন । 

আধুনিক ক্রিকেটে  যেকোন বোলারের সফলতার ক্ষেত্রে বোলিং বৈচিত্র  একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে রুবেলের ভান্ডারে বৈচিত্র খুবই সীমিত। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য রুবেলের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করা খুব কষ্টসাধ্য কিছু না।

রুবেলের ক্যারিয়ারের কিছু সেরা মুহূর্ত 

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুবেলের আইকনিক সেই মুহূর্ত

বাংলাদেশ ক্রিকেটে রুবেল হোসেন কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন যেইগুলোর স্মৃতিমন্থন করলে একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে অন্যরকম একটা অনুভূতির জন্ম দেয়। 

  • ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরেদ্ধে সেই অসাধারন স্পেলটকে সাতপাঁচ না ভেবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা হিসিবে আখ্যায়িত করা যায়। জেমস অ্যান্ডারসনকে ইয়র্কারে বোল্ড করার মাধ্যমে জন্ম দিয়েছিলেন সেই আইকনিক মুহূর্ত। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে উঠেছিল।  
  •  ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৬ রানে ৬ উইকেটও রুবেল হোসেনের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা স্পেলের মধ্যে একটা। এই স্পেলের তাৎপর্যটুকু বিস্তরভাবে আলোকপাত করতে গেলে , এই ছয় উইকেটের মধ্যে রয়েছে হ্যাট্রিকও। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রুবেলের নিন্মমুখী পারফরম্যান্স

রুবেল হোসেন

রুবেলের ক্যারিয়ারকে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুটি সময়ে ভাগ করলে আমরা যথেস্ট তারতম্য দেখতে পাই।২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি বেশ ভালো পারফরম্যান্স করছিলেন, এই সময়ের মধ্যে ৫৭ ম্যাচে ৩২.৭১ গড়ে ৭৭ উইকেট স্বীকার করেছেন।   

  • ২০১৫ সালের বিশকাপের পর থেকে খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার দল থেকে বাদ পড়েছেন। যদিও অভিজ্ঞতার জন্য দলে আবার ফিরে এসেছেন। 
  • ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৪ ম্যাচে ৩৭.২৮ গড়ে মাত্র ৩৯টি উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া এই সময়ের মধ্যে তিনি অনেক খরুচে বল করেছেন-  ওভার প্রতি ৫.৮৭ গড়ে রান দিয়েছেন। 
  • ২০১৮ সালে নিদাহাশ ট্রপীতে ভারতের বিরুদ্ধে ডেথ ওভারে তার খরুচে বোলিং এর কারনে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত ভারতের বিরুদ্ধে তিনজাতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে বঞ্ছিত হয়। 
  • ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখলেও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখেছেন। যেখানে দুই ম্যাচে ১৩১ রান খরচ করে মাত্র এক উইকেট নিয়েছেন।

কিভাবে নিজের সরূপে ফিরবেন রুবেল?

রুবেলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সরূপে ফিরতে হলে অবশ্যই তার স্কিল লেভেল নিয়ে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বলের  লাইন এবং লেন্থ নিয়ে কাজ করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। 

ইনিংসের কোন সময় কোন বলগুলো করবেন সেগুলো নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরী। তার জন্য তিনি প্রথম দিকের ওভার ও ডেথ ওভার নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে পারেন। 

যেকোন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে খারপ সময় আসে। এই খারাপ সময়ে রুবেল নিজেকে কতটুকু পরিবর্তন করতে পারেন তার উপর নির্ভর করবে তার সামনের দিনগুলো।

শেষ কথা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন ভক্ত হিসিবে আবারো মাঠে রুবেলের সেই রুদ্রমূর্তিকে দেখতে চাই। যেই রুবেল কিনা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য ত্রাস এবং হুমকির কারন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *